ব্রেকিং
প্রকাশ: ২০:২৩, ২৪ অক্টোবর ২০২২
ভারতীয় বংশোদ্ভূত সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচিত হয়েছেন।
ফলে, এই প্রথম ব্রিটেনে একজন ব্রিটিশ এশিয়ান রাজনীতিক প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন। কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব নির্বাচনকারী এমপি কমিটির প্রধান স্যার গ্রেম ব্রেডি নিশ্চিত করেছেন যে ঋষি সুনাকই হবেন দলের পরবর্তী নেতা এবং দেশের প্রধানমন্ত্রী।
এ বছরের মাঝামাঝি মিথ্যা বলার কেলেঙ্কারিতে পড়ে বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রীত্ব ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পর নেতৃত্বের নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন ঋষি সুনাক।
কিন্তু তাকে হারিয়ে যিনি দলের নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী হন, সেই লিজ ট্রাস মাত্র দেড় মাস ক্ষমতায় থাকার পর গত সপ্তাহে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
এর পরপরই আবারও নেতৃত্বের জন্য তার প্রার্থিতা ঘোষণা করেন মি. সুনাক। শেষ পর্যন্ত অন্য কেউ তাকে চ্যালেঞ্জ না করায় ঋষি সুনাকই কনজারভেটিভ দলের নেতা এবং সেইসাথে প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন।
গত মাসে সেপ্টেম্বরে নেতৃত্বের নির্বাচনে যিনি হেরে গিয়েছিলেন, পরের মাসেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি জিতে গেলেন।
ধারণা করা হচ্ছিল মন্ত্রী এবং প্রভাবশালী এমপি পেনি মর্ডান্ট এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ঋষি সুনাককে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। কিন্তু বরিস জনসন রোববার রাতেই জানিয়ে দেন তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। আর আজ (সোমবার) বেলা দুটোয় প্রার্থিতা ঘোষণার সর্বশেষ সময় পার হয়ে যাওয়ার ঠিক আগে মিজ মর্ডান্টও জানিয়ে দেন তিনি নেতা নির্বাচনের এই দৌড়ে যোগ দিচ্ছেন না।
বিবিসির সংবাদদাতা নিক আর্ডলি বলছেন আগামীকাল (মঙ্গলবার) আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে পারেন মি. সুনাক।
গত মাসেই নেতৃত্বের নির্বাচনে যিনি হেরে গিয়েছিলেন পরের মাসেই দলের বিপুল সংখ্যক এমপির সমর্থন নিয়ে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা হলেন মাত্র ৪২ বছর বয়সী সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক।
ঋষি সুনাক: ভারতীয় বংশোদ্ভূত যে রাজনীতিক ব্রিটেনে ইতিহাস গড়লেন
ক্ষমতাসীন পার্টি কনজারভেটিভ পার্টি নেতা এবং সেই সাথে দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ঋষি সুনাকের নির্বাচন ব্রিটেনের রাজনীতিতে একটি মোড় ঘোরানো ঘটনা।
কারণ এই প্রথম ব্রিটেনে একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত অভিবাসীর সন্তান, একজন অশ্বেতাঙ্গ ব্রিটেনের রাষ্ট্র ক্ষমতার শীর্ষ পদে বসছেন।
মি. সুনাকের বাবা-মা ভারতীয় বংশোদ্ভূত হলেও তারা থাকতেন পূর্ব আফ্রিকায়, এবং সেখান থেকেই তারা ব্রিটেনে এসে বসবাস শুরু করেন।
ঋষি সুনাকের জন্ম ১৯৮০ সালে ইংল্যান্ডের বন্দরনগরী সাদাম্পটনে। তার বাবা সেখানে চিকিৎসক ছিলেন। মা একটি ফার্মেসি চালাতেন । ফলে পরিবার ছিল বেশ সচ্ছল।
নাম করা প্রাইভেট স্কুল উইনচেস্টার কলেজে পড়াশোনা করেছেন তিনি। গ্র্যাজুয়েশন করেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
পরে আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছেন। সেখানেই তার সাথে পরিচয় হয় ভারতীয় ধনকুবের এবং আইটি সেবা কোম্পানি ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তির মেয়ে অক্ষতার সাথে। তারপর প্রেম এবং প্রণয়। দুটো মেয়ে রয়েছে এই দম্পতির।
দু'হাজার এক সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত মি. সুনাক মার্কিন বিনিয়োগ কোম্পানি গোল্ডম্যান সাক্সে চাকরি করেছেন। পরে দুটো হেজ ফান্ডের অংশীদার ছিলেন।
ক্ষমতার রাজনীতিতে দ্রুত উত্থান
ঋষি সুনাক ২০১৫ সালে প্রথম উত্তর ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ার কাউন্টির রিচমন্ড এলাকার এমপি হন।
ব্রেক্সিট অর্থাৎ ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনকে বের করে আনার পক্ষে কাজ করেছেন তিনি। ব্রেক্সিট গণভোটের প্রচারণার সময় পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ব্রেক্সিটের পর ব্রিটেন "আরও মুক্ত, আরও সমৃদ্ধ দেশ হবে।"
সে সময় তিনি শক্ত অভিবাসন নীতির পক্ষে কথা বলেন। তিনি বলেছিলেন, "যদিও আমি বিশ্বাস করি যথাযথ অভিবাসন নীতি দেশের জন্য মঙ্গলজনক। কিন্তু সীমান্ত আমাদেরকে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।"
টেরিজা মে'র সরকারে ঋষি সুনাক স্থানীয় সরকার বিভাগে জুনিয়র মন্ত্রী হন। পরে বরিস জনসন ক্ষমতা নেওয়ার পর তাকে পদোন্নতি দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিফ সেক্রেটারি নিয়োগ করেন।
বরিস জনসনের সাথে মনোমালিন্য তৈরি হওয়ায় তৎকালীন অর্থমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে পদত্যাগ করলে অর্থমন্ত্রী হন ঋষি সুনাক।
কিন্তু ২০২২ সালে কোভিড লকডাউন ভেঙ্গে পার্টি করা এবং তা নিয়ে মিথ্যা বলার অভিযোগে প্রচণ্ড চাপে বরিস জনসন যখন হিমশিম খাচ্ছিলেন, তখন অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন মি. সুনাক।
অনেকে মনে করেন, তার পদত্যাগের মধ্য দিয়েই বরিস জনসনের পতন ত্বরান্বিত হয়েছিল। বরিস সমর্থকরা তার বিরুদ্ধে সুযোগ-সন্ধানীর অভিযোগ আনলেও মি. সুনাক বলেছিলেন, নৈতিক কারণে সে সময়ে তিনি সরে গিয়েছিলেন।
বরিস জনসনের পদত্যাগের পরপরই নেতৃত্বের নির্বাচনে প্রার্থী হন ঋষি সুনাক। প্রচারণায় তিনি নিজেকে চৌকস একজন আর্থিক ব্যবস্থাপক হিসাবে তুলে ধরেন। তার প্রচারণার প্রধান বার্তা ছিল - কোভিড এবং ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে ব্রিটিশ অর্থনীতি ভীষণ সংকটে এবং তার প্রধান কাজ হবে এর সমাধান করা।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেপ্টেম্বর মাসে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচনের ভোটে তিনি লিজ ট্রাসের কাছে হেরে যান।
তার সরকারের দেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন বাজেটে আর্থিক খাতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ায় দলের ভেতর প্রচণ্ড চাপে পড়ে গত সপ্তাহে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস।
এর পরপরই আবারও নেতৃত্বের ব্যাপার তার প্রার্থিতা ঘোষণা করেন ঋষি সুনাক। এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলের নেতা নির্বাচিত হয়ে যান।
মাত্র ৪২ বছরের মি. সুনাক হবেন ব্রিটেনের ৫৭তম প্রধানমন্ত্রী, এবং ১৮১২ সালের পর থেকে সবচেয়ে কম বয়সী প্রধানমন্ত্রী।
ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির রাজনীতিকরা একে এক দলের নতুন নেতাকে অভিনন্দন জানাতে শুরু করলেও দুই বিরোধী দল - লেবার পার্টি ও লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি আবারও সাধারণ নির্বাচন দাবি করেছে।
লেবার পার্টির উপনেতা অ্যাঞ্জেলো রেইনার টুইট করেছেন -"যে ব্যক্তি ক্ষমতায় গিয়ে কী করবেন তা নিয়ে বিন্দুমাত্র কিছু বলেননি, তাকেই কনজারভেটিভ পার্টি তাদের নেতা বানিয়েছে...ব্রিটিশ জনগণ নতুন নির্বাচন চায়।"
লিবারেল ডেমোক্র্যাট নেতা এড ডেভি এক বিবৃতিতে বলেছেন দেশের বর্তমান বাস্তব পরিস্থিতির সাথে যার কোনো সম্পর্ক নেই তেমন একজনকে কনজারভেটিভ পার্টি তাদের নেতা নির্বাচিত করেছে। "তার দল অর্থনীতির যে সর্বনাশ করেছে তা তিনি কিভাবে ঘোচাবেন সে ব্যাপারে তার কোনও কথা নেই। এখন একমাত্র সমাধান নতুন নির্বাচন।"
সিলেট নিউজ ২৪