ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫

২৯ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৪ রমজান ১৪৪৬

বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস: “হ্যান্ড হাইজিন ফর অল”

প্রকাশ: ১৯:৫৯, ১৪ অক্টোবর ২০২০

বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস: “হ্যান্ড হাইজিন ফর অল”

১৫ই অক্টোবর বিশ্ব  হাত ধোয়া দিবস। প্রতি বছর  এই দিবসটি আড়ম্বরপূর্ণভাবে পালন করা হলেও এবার করোনা মহামারীর কারণে সংক্ষিপ্ত কর্মসূচীর মাধ্যমে দিবসটি পালনের উদ্যোগ নেয়া হয়। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য “হ্যান্ড হাইজিন ফর অল”। 

এবছর এই বিশ্ব হাতধোয়া দিবসের  অনেক তাৎপর্য্য রয়েছে। বিশ্ব এখন করোনা মহামারীতে আক্রান্ত। হাত-ধোয়া কে করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচার অন্যতম উপায় হিসেবে গণ্য করা হয়। যদিও অতীতে হাত-ধোয়া  বিশেষ কিছু সময়ে অর্থ্যাৎ প্রসব কাজে যারা নিয়োজিত, চিকিৎসার ক্ষেত্রে, খাবার আগে-পরে, পায়খানা থেকে আসার পর, শিশুদের খাওয়ানোর আগে! তবে এবার বিশ্ব  স্বাস্থ্য সংস্থা বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়ার কথা বলে আসছে।

হাত ধোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত বলার আগে জেনে নিই কিভাবে এই দিবস পালনের উৎপত্তি কিভাবে। ২০০৮ সালে বিশ্ব পানি সপ্তাহে সুইডেনের স্টকহোমে ১৫ই অক্টোবর বিশ্ব হাতধোয়া অংশীদার  (GHP)  এবং FHI360 (আমেরিকা ভিত্তিক একটি অলাভজনক মানব উন্নয়ন সংস্থা) ) বিশ্ব ব্যাপী আঞ্চলিক ও স্থানীয় পর্যায়ে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দ্যেশ্যে সর্বপ্রথম এই দিবসটি উদযাপন করে। পরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ঐ দিনটিকে বিশ্ব  হাত ধোয়া দিবস হিসেবে প্রতিবছর পালন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। 

২০০৮সালটি ছিল আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বর্ষ। ঐ সালে দিবসটি পালনে প্রতিষ্টাতা সংস্থাগুলো হল ইউএসএআইডি, ইউনিসেফ, ইউনিলিভার, বিশ^ব্যাংকের পানি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রোগ্রাম, প্র্যাকটার এন্ড গ্যাম্বল, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র এবং আমেরিকা ভিত্তিক একটি অলাভজনক মানব উন্নয়ন সংস্থা। 

বিশ্ব হাত ধোয়া দিবসের মূল লক্ষ্য হল- প্রতিটি দেশে হাত ধোয়ার বিষয়ে নজর দেয়া, সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, সকল সমাজে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার একটি সাধারণ সংস্কৃতির সমর্থন ও প্রচলন করা। মূলত হাত ধোয়ার মাধ্যমে রোগের বিস্তার রোধ করার জন্য সচেতনতা তৈরীর উদ্দেশ্যে বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস পালন করা হয়।

আমরা সবসময় নাক, মুখ ও চোখে হাত দেই। এতে সহজে আমাদের শরীরে জীবানু প্রবেশ করে। নিয়মিত সাবান পানি দিয়ে হাত ধুইলে খাদ্য সামগ্রী ও পানি সংক্রমিত হওয়া এড়ানো যায়, মুখে জীবানুর প্রবেশ এড়ানো যায়, ডায়রিয়া, চর্মরোগ ও কৃমির সংক্রমণ এড়ানো যায়। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) তথ্য মতে হাত ধোয়ার অভ্যাসের কারণে করোনা সংক্রমণ ছাড়াও ডায়রিয়ার মত অসুস্থতা ৪০শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব।

সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ফলে শিশুদের ফুসফুসে প্রদাহের সংক্রমণ ঠেকানো যায়। যেসব  খাদ্যবাহিত রোগ আকান্ত করে তার অর্ধেক সঠিকভাবে হাত ধোয়ার ফলে কমানো যায়।   এজন্য খাবার তৈরী বা রান্না করার আগে ও পরে, কোন খাবার খাওয়ার আগে বা শিশুকে খাওয়ানোর আগে, পায়খানা-টয়লেট ব্যবহার করার পরে বা মল ত্যাগের পরে, শিশুর পায়খানা পরিষ্কার করার পরে এবং গোবাদি পশু-পাখি ধরার পরে এবং তাদের পায়খানা পরিষ্কার করার পরে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে  ভালভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুইতে হবে।

পারিবারিক শিক্ষা হিসেবে শিশু বয়সে ব্রাশ করা বা গোসলের মত হাত ধোয়াকে গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য আগে বড়দেরকে অভ্যাস করতে হবে। সবক্ষেত্রে রানিং ওয়াটার বা প্রবাহমান পানি ব্যবহার করতে হবে। এজন্য টেপ, টিউবওয়েল বা মগ দিয়ে বালতি থেকে আরেক জন পানি ঢালবেন অথবা পানির অব্যবহৃত বোতল দিয়ে টিটিট্যাপ তৈরী করা য়ায়।

যদিও বিভিন্ন সময়ে হাত ধোয়ার ৬ থেকে ৭টি ধাপের কথা বলা হয়, এবছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কমপক্ষে ১০টি ধাপের সুপারিশ করছে।

* প্রথমে পানি দিয়ে হাত ভিজিয়ে হাতের সব জায়গায় লাগানো যায় এমন পরিমান সাবান নিন।
*ডান ও বাম হাতের তালু চক্রাকারে ঘষুন।
*ডান হাতের তালু দিয়ে বাম হাতের পৃষ্ঠদেশ এবং বাম হাতের তালু দিয়ে ডান হাতের পৃষ্টদেশ এবং আঙ্গুল জড়িয়ে ঘষুন।
*দুই হাতের তালু মিলিয়ে আঙ্গুল জড়িয়ে ঘষুন।
*দুই হাতের আঙ্গুল জড়িয়ে আঙ্গুলের পৃষ্টদেশ বিপরীত হাতের তালু দিয়ে ঘষুন।
*ডানহাতের তালুবন্দি অবস্থায় বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির চারপাশ এবং বামহাতের তালুবন্দি অবস্থায় ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির চারপাশ চক্রাকারে ঘষুন।
*ডান হাতের আঙ্গুল অর্ধমুষ্ঠি করে বাম হাতের তালুর উপরে এবং বাম হাতের আঙ্গুল অর্ধমুষ্ঠি করে ডান হাতের তালুর উপরে সামনে পিছে চক্রাকারে ঘষুন।
*চলন্ত পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন।
*টিস্যু দিয়ে হাত মুছে ফেলুন।
*টিস্যু বা তোয়ালে দিয়ে পানির টেপ বন্ধ করুন।

ভুলে গেলে চলবেনা অক্টোবর মাসকে স্যানিটেশন মাস হিসেবেও পালন করা হয়। প্রতিবছরই ঘটা করে উদযাপন করলেই তো আর হয়না এর সুফল গ্রামে-গঞ্জে, পাড়ায় মহল্লায় পৌঁছে দিতে হবে। কিন্তু এবছর করোনা মহামারীর কারণে সম্ভব হচ্ছেনা। 

অন্যান্য বছর বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে কমিউনিটি ক্লিনিক, গ্রাম এবং স্কুল পর্যায়ে হাত-ধোয়ার গুরুত্ব ও উপকারিতা নিয়ে আলোচনা, র‌্যালী ও হাত ধোয়ার প্রদর্শণি করা হয়। কিন্তু এবার যেহেতু সম্ভব হচ্ছেনা সেজন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রতিটি মসজিদের খতিব ও ইমাম সাহেবদের বলে দেয়া তাঁরা যেন জুমার খুতবায় এ বিষয়ে ইসলামের আলোকে আলোচনা করেন। শুধু মাত্র একদিন বা মাসব্যাপী কর্মসূচী পালন করলে বা দিবস উদযাপন করলেই রোগ-মুক্ত থাকা যাবেনা, প্রয়োজন অভ্যাস গড়ে তোলা। এজন্য স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।

লেখক: এ. কে. শামীম আহমদ, নিওট্রেশন অফিসার- এফআইভিডিবি-সূচনা প্রকল্প। তথ্য সূত্র- উইকিপিডিয়া এবং বেসিক নিওট্রেশন প্রশিক্ষণ মড্যুল-সুচনা প্রকল্প।

সিলেট নিউজ ২৪

আরও পড়ুন