ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

১১ বৈশাখ ১৪৩২, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৬

স্বচ্ছ পানি-পাথর আর চা-বাগানের সৌন্দর্য্য মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে পর্যটকদের

খালেদ আহমদ:

প্রকাশ: ১৯:২১, ২ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ১৯:৩০, ২ এপ্রিল ২০২৫

স্বচ্ছ পানি-পাথর আর চা-বাগানের সৌন্দর্য্য মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে পর্যটকদের

ঈদের তৃতীয়ও দিনে পর্যটকদের স্রোত সিলেটের পর্যটন স্পটগুলোতে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের কোলাহলে মুখরিত ছিল সিলেটের পর্যটন স্পটগুলো। লাখো লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছে সিলেটের অন্যতম পর্যটন স্পট সাদাপাথর ও জাফলং এলাকা। তাদের নিরাপত্তায় হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

বুধবার সকাল থেকে সাদাপাথর, জাফলং, বিছনাকান্দি, লালাখালসহ পর্যটন কেন্দ্রে মানুষজন ছুটে যায়। বিকেলের দিকে তা লোকারণ্য হয়ে ওঠে। হৈহুল্লোড় ও সাঁতার কেটে, পানিতে ডুব দিয়ে, সেলফি তুলে এক অপূর্ব সুন্দর সময় কাটান এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকরা। প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করে মুগ্ধ তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আল নাহিয়ান বলেন, আমার বাড়ি নরসিংদী জেলায়। ঈদের ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিলাম। গত রাতে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে সিলেটে ঘুরতে আসি। সকালে আমরা সাদাপাথর এলাকায় ঘুরতে যাই। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য আমাদের পরিবার ও আত্মীয়দের মুগ্ধ করেছে। এখানকার স্বচ্ছ পানি সাদাপাথর আর প্রকৃতি এতো সুন্দর আমি এর আগে কখনো দেখিনি। 

কুমিল্লার ইউনিভার্সিটির ছাত্রী উম্মে হাফছা সাদাপাথর এলাকার সৌন্দর্যের প্রশংসা করে তিনি বলেন, সিলেটের যতগুলো পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে তার মধ্যে সাদাপাথর আমার কাছে সবচেয়ে পছন্দের। আমি আগেও বেশ কয়েকবার এখানে ঘুরেছি। এখানকার প্রকৃতি এক কথায় অসাধারণ। সিলেটে এসে পর্যটকরা ভুলছেন না ওলিকুর শিরমণি হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরান (রহ.) মাজার জিয়ারত করতে। এসব মাজার ঘিরে অসংখ্য পর্যকরা ভিড় করেছেন। বিশেষ করে নগরীর শাহজালাল দরগাহে পর্যটকদের ভিড় উপচেপড়া।

এদিকে সাদাপাথর এলাকায় ঘুরতে আসা পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। পর্যটন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহার বলেন, পর্যটন কেন্দ্রে আসা মানুষের সার্বিক নিরাপত্তা ও সুব্যবস্থা নিশ্চিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এখানকার থানা পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছেন। ঈদের মৌসুম হওয়ার কারণে আমরা ১২ জন আনসার মোতায়েন করেছি, সেই সঙ্গে থানা পুলিশের একটি টিম এখানে কাজ করছে। পর্যটকদের গাড়ি পার্কিং এরিয়াতে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করেছে। নৌঘাট থেকে প্রায় দেড় হাজার নৌকা পর্যটন স্পটে আসা যাওয়া করছে। কোথাও কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, সাদাপাথর ও জাফলংয়ে লাখো পর্যটকের ঢল নেমেছে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমাদের প্রধান দায়িত্ব। সংশ্লিষ্ট থানা এলাকার ওসি সহ পুলিশের সব কর্মকর্তাদের সার্বিক দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেয়া আছে। তবে এখন পর্যন্ত শান্তি শৃঙ্খলাভাবেই পর্যটকরা বিভিন্ন স্পটের বেড়াচ্ছেন এবং সৌন্দর্য উপভোগ করছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার ১৫ লক্ষাধিক পর্যটক সিলেটে আসতে পারেন। পর্যটকদেন বরণে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন আবাসিক হোটেল-মোটেল ও পর্যটন স্পটগুলোতে। এবার পর্যটন স্পট ছাড়াও সিলেটের চা বাগানগুলোতে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপার লীলাভূমি এই সিলেট। এখানে বেড়ানোর জায়গার যেন শেষ নেই। উঁচু-নিচু পাহাড়ে ঘেরা সিলেটে পাহাড়ের ঢেউ খেলানো চা-বাগান নিমিষেই পর্যটকের মন কেড়ে চা বাগান। মহানগরের মধ্যে লাক্কাতুড়া, মালনিছড়া, তারাপুর ও দলদলি চা বাগান অবস্থিত। স্থানীয় ও দেশি-বিদেশি পর্যটকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে সেখানে বেড়াচ্ছেন আনন্দ খুশিতে।

পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা ঢাকার বাসিন্দা সুবর্না বলেন, আমি প্রথমবার সিলেটের চা বাগানে এসেছি। এর আগে আমি ছবিতে, ভিডিওতে দেখেছি কিন্তু বিশ্বাস করতে পারিনি বাস্তবে চা বাগান এতো সুন্দর। এখানে থেকে যেত ইচ্ছে করছে না।

পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি ব্যবস্থা নেওয়া আছে। বিনোদন কেন্দ্রের ভেতরে ও কেন্দ্রগুলোর বাইরে পুলিশের সার্বক্ষনিক টহল রয়েছে। কারো কোনো সমস্যা হলে আমাদেরকে অবহিত করলে আমরা তড়িৎ ব্যবস্থা নেব।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন