ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫

২৯ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৩ রমজান ১৪৪৬

তীব্র সংকটে ডলারের বাজার অস্থির, দর উঠেছে ১২৮ টাকা

প্রকাশ: ০৪:০১, ১১ নভেম্বর ২০২৩

তীব্র সংকটে ডলারের বাজার অস্থির, দর উঠেছে ১২৮ টাকা

তীব্র সংকটে ডলারের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। ডলার সংকট কাটাতে যেসব উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে তা সবই ভেস্তে যাচ্ছে। বাজারে দাম নিয়ে দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলা। প্রতিনিয়ত বাড়ছে মুদ্রাটির দাম। 

ডলারের দামের ওপর পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাফেদা ও এবিবি’র ওপর ছেড়ে দেয়ার পর মুদ্রাটির দর নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। ফলে খোলা বাজারে ডলারের দাম রেকর্ড সর্বোচ্চ ১২৮ টাকায় পৌঁছেছে। অনেক ব্যাংক ডলার পাচ্ছে না। 

আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শিথিলতার  সুযোগে প্রতিযোগিতা করে ১২৪ টাকা দরেও ডলার কিনেছে অনেক ব্যাংক। 
ডলার বাজারের এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা এবং নির্ধারিত দামে ডলার বিক্রিসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে  জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তা চেয়েছেন বিভিন্ন ব্যাংকের এমডি ও প্রধান নির্বাহীরা।

বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে ডলারের দাম নির্ধারণ করছে বাফেদা এবং এবিবি। তবে অনেক ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ হাউজ নির্ধারিত দাম ডলার কেনা-বেচা করছে না। এ পরিস্থিতিতে ডলার বাজার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা চেয়েছে এবিবি ও বাফেদা। 

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেমিট্যান্সের ডলার কেনার ক্ষেত্রে কিছুটা নমনীয় হওয়ার পর বাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। রেমিট্যান্সের ডলার কেনার ক্ষেত্রে কোনো নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। প্রণোদনার নামে রেমিট্যান্সের ডলার ১২১ থেকে ১২৩ টাকা দরেও কিনছে কোনো কোনো ব্যাংক। বেশির ভাগই কিনছে ১১৪ থেকে ১১৬ টাকা করে। এতে ডলারে কেনার খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমদানিতেও প্রিমিয়াম এবং নানা ফির নামে বেশি দামে ডলার বিক্রি হচ্ছে। 

আমদানির ডলার ১১১ টাকা করে বিক্রির কথা থাকলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১৪ থেকে ১১৭ টাকা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশি। এতে রপ্তানিকারকরাও আপত্তি করেছেন। তারা ১১০ টাকা ৫০ পয়সা দরে এখন ডলার বিক্রি করতে চাচ্ছেন না।

জানা গেছে, করোনার পর অর্থনীতিতে বাড়তি চাহিদা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং অর্থপাচার ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় হুন্ডিতে ডলারের চাহিদা বেড়েছে। এতে করে ডলারের দর হু হু করে বেড়ে গত বছরের মাঝামাঝি ১১৪ টাকায় ওঠে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্থতায় গত বছরের ১১ই সেপ্টেম্বর থেকে ডলারের দর ঠিক করে আসছে ব্যাংকগুলো।

প্রসঙ্গত, বেশ কয়েকটি ব্যাংক নির্ধারিত দরের চেয়ে ১০/১২ টাকা বেশি দামে ডলার কিনেছে। এমনকি খোলা বাজারের চেয়েও দুই থেকে পাঁচ টাকা বেশি দরে ডলার কেনার ঘটনা ঘটেছে। বেশ কয়েকটি ব্যাংক ১২৩ থেকে শুরু করে ২২৪ টাকা দরে ডলার কিনেছে। 

জরুরি বৈঠক প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, গত ৬ মাসে এমন সমস্যা ছিল না, ডলারের দাম ১২৪ টাকা কখনো হয়নি। বাড়তি প্রণোদনা উন্মুক্ত করায় ডলারের বাজারে বিশৃঙ্খলা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সবধরনের সহায়তা করা হবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়েছে।

এদিকে খোলা বাজারে একদিনে ডলারের দাম ৫-৬ টাকা বেড়ে গেছে। মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ১২৭ থেকে ১২৮ টাকায়। অথচ একদিন আগেও এর দাম ছিল ১২১-১২২ টাকা। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত হার অনুযায়ী খুচরা বাজারে ডলারের দাম ১১৪ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়।

সরজমিন দেখা যায়, রাজধানীর বিজয় সরণিতে এক মানি চেঞ্জার এক গ্রাহককে বলছেন, বিক্রি করার মতো ডলার নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা ডলার বিক্রি করতে চাই। কিন্তু আগে আমাকে ডলার পেতে হবে। ১২৩ থেকে ১২৪ টাকা প্রস্তাব দিলেও আমরা কোনো ডলার পাচ্ছি না। তাই বিক্রি করার মতো ডলার নেই।

এদিকে ডলার কিনতে গিয়ে অনেক গ্রাহক খালি হাতে ফিরেছেন। 

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চিকিৎসার জন্য প্রতি মাসে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি ভারতসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যান। প্রচুর শিক্ষার্থীও বিদেশে পড়াশোনার জন্য যান। আর পর্যটনের জন্যও ভ্রমণপিপাসুরা এখন বিশ্বের নানা প্রান্তে ছুটছেন। এসব গ্রাহক খোলাবাজার থেকে ডলার কিনে থাকেন।

নগদ ডলারের পাশাপাশি অনেকে বিদেশে গিয়ে কার্ডেও ডলার খরচ করে থাকেন। সম্প্রতি দেশে ডলার সংকটের কারণে নগদ ডলারের পরিবর্তে কার্ডের মাধ্যমে ডলার খরচের প্রবণতা বেড়েছে। কার্ডের মাধ্যমে খরচ করলে ব্যাংকগুলো প্রতি ডলারের দাম রাখে ১১৪ টাকা।

সিলেট নিউজ ২৪

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন