ব্রেকিং
প্রেস বিজ্ঞপ্তি:
প্রকাশ: ১৫:৩৯, ৯ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ১৮:২২, ৯ এপ্রিল ২০২৫
উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক ইত্তেফাকের সাবেক নির্বাহী সম্পাদক বৃহত্তর সিলেটের কৃতি সন্তান হাসান শাহরিয়ারের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী কাল (১০ এপ্রিল) বৃহস্পতিবার।
২০২১ সালের এই দিনে তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঘরোয়া পরিবেশে মরহুমের নিজ বাড়ী সুনামগঞ্জে, ঢাকার সেগুনবাগিচা এপার্টম্যান্ট ও সিলেটে দোয়া মাহফিল অনুষ্টিত হবে।
হাসান শাহরিয়ার সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংবাদ সাময়িকী ‘নিউজউইক’, পাকিস্তানের 'দি ডন', মধ্যপ্রাচ্যের 'খালিজ টাইমস', চট্টগ্রামের ‘ডেইলি পিপলস ভিউ’-এর প্রধান সম্পাদক ও দক্ষিণ ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক ‘ড্যাকান হেরাল্ড’-এর বাংলাদেশ প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেছেন। আন্তর্জাতিক বিষয়ে বিশেষ করে ভারত ও পাকিস্তান বিষয়ক একজন বিশ্লেষক হিসেবে হাসান শাহরিয়ার দেশে-বিদেশে সমাদৃত ছিলেন।
বৈদেশিক সংবাদদাতা সমিতি ওকাব-এর সাবেক সভাপতি, কমনওয়েলথ জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশন (সিজেএ)-এর ইন্টারন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ইমেরিটাস ছিলেন হাসান শাহরিয়ার।
একমাত্র তিনিই এশিয়া-প্যাসিফিকের প্রথম সাংবাদিক ছিলেন, যিনি গত ২০০৩ সালে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় এই সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে মালয়েশিয়ার কুচিং-এ অনুষ্ঠিত সিজেএ সম্মেলনে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো ইন্টারন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এসময়ও তার কোনো প্রতিদ্বন্ধি ছিল না। ২০১২ সালে মাল্টা সম্মেলনে তিনি ইন্টারন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ইমেরিটাস নির্বাচিত হন। সাংবাদিকতায় অনন্য অবদানের জন্য বাংলা একাডেমী তাকে ফেলোশীপ প্রদান করে। তিনি ‘অতীত অতীত নয়,’ ‘যার শেষ ভালো তার সব ভালো’, 'যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা’, ‘ নিউজ উইক’এ বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ, বিজয় এবং অতঃপর' শীর্ষক বই লিখে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল তাকে মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান করেছে।
শাহরিয়ার একজন নির্ভীক সাংবাদিক হিসেবে বহু প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও ন্যায় ও সত্যের পথ বেছে নিয়ে তিনি সাংবাদিকতা পেশাকে সমুন্নত রাখার চেষ্টা করছেন। নীতির প্রশ্নে তিনি কখনো আপোস করেননি। এ জন্যে তিনি কয়েকবার চাকরি থেকে পদত্যাগ করেছেন। সম্পাদকের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে একটি প্রকাশিতব্য ইংরেজি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করে বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
হাসান শাহরিয়ারের জীবন-কাহিনী বর্ণাঢ্য ও সফল। তাঁর জন্ম বৃহত্তর সিলেটের সুনামগঞ্জ শহরের হাছন নগরে, ১৯৪৬ সালের ২৫ এপ্রিল। অবশ্য তাঁর পারিবারিক নিবাস তাহিরপুর থানার লাউড় পরগনার বিন্নাকুলি গ্রামে। পিতা মকবুল হোসেন চৌধুরী ছিলেন তদানীন্তন আসামের প্রথম মুসলিম সম্পাদক। তিনি কলকাতার দৈনিক ‘ছোলতান’, সিলেটের সাপ্তাহিক ‘যুগবাণী’, ‘যুগভেরী’ ও ‘সিলেট পত্রিকা’ সম্পাদনা করেন। তিনি ছিলেন খেলাফত নেতা, আসাম ব্যবস্থাপক সভার সদস্য (এমএলএ) ও ভাষাসৈনিক। পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে সাংবাদিকতার পথে এগিয়ে আসেন হাসান শাহারিয়ার। বিশিষ্ট কলামিষ্ট হোসেন তওফিক চৌধূরীর অনুজ হাসান শাহরিয়ার। তওফিক চৌধূরী ঢাকার অধূনালুপ্ত দৈনিক পূর্বদেশ এর সিনিয়ার রিপোর্টার হিসাবে কাজ করে সুনাম অর্জন করেছেন। তিনি সুনামগঞ্জ জজকোর্টের একজন সিনিয়র আইনজীবি ও কলামিস্ট।
হাসান শাহরিয়ার সুনামগঞ্জ সরকারী জুবিলী হাই স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন বা প্রবেশিকা, সুনামগঞ্জ কলেজ থেকে আই,এ এবং করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি,এ (অনার্স) ও এম,এ ডিগ্রী লাভ করেন। স্কুল জীবন থেকেই হাসান শাহরিয়ারের প্রতিভা বিকশিত হতে শুরু করে এবং সাহিত্য ও সাংবাদিকতার দিকে তিনি ঝুঁকে পড়েন। তিনি স্কুল বার্ষিকীর সম্পাদনা করেন। তার শিক্ষক আব্দুর রহীম তাকে গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ লিখতে উৎসাহিত করেন। প্রগতিশীল সাংবাদিক ও সমাজসেবক মুহাম্মদ আব্দুল হাই-এর সম্পাদনায় সুনামগঞ্জ থেকে ‘সুরমা’ নামের পত্রিকায় তাঁর সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি। তিনি ছিলেন বন্ধু বৎসল আমায়িক ব্যবহারের অধিকারী ও ধর্মপ্রাণ। তিনি কয়েকবার পবিত্র হজ্জ পালন করেছেন।
ছাত্রাবস্থায় তিনি ছিলেন একজন কর্মঠ স্কাউট এবং শিশু কিশোর সংগঠন ‘কচি-কাঁচার মেলা’র একজন দক্ষ সংগঠক। তিনি ছিলেন সুরমা-কাকলী কচি-কাঁচার মেলার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৬৩ সালে বন্যার্তদের সাহায্যের জন্য কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার পক্ষ থেকে পরিচালক রোকনুজ্জামান খান (দাদা ভাই)-এর নেতৃত্বে যে প্রতিনিধিদল চট্টগ্রাম গিয়েছিল তিনি তার অন্যতম সদস্য ছিলেন।
কচি-কাঁচার মেলার সঙ্গে জড়িত থাকাবস্থায় তাঁর পরিচয় ঘটে সিলেট এইডেড হাই স্কুলের শিক্ষক ও বিশিষ্ট শিশু কিশোর সংগঠক রিয়াসত আলীর সঙ্গে। রিয়াসত আলী তাকে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে উৎসাহ দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে ১৯৬৩ সালে রিয়াসত আলী ও দৈনিক ‘ইত্তেফাক’-এর তদানীন্তন মফস্বল সম্পাদক ও কচি-কাঁচার আসরের পরিচালক রোকনুজ্জামান খান (দাদা ভাই)-এর চেষ্টায় ‘ইত্তেফাক’ এর বার্তা সম্পাদক শহীদ সিরাজ উদ্দিন হোসেন তাকে সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা নিয়োগ করেন।